বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলার সময় পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো চারটি হত্যা মামলা হয়েছে।
বুধবার( ২১ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাগুলো করা হয়। আদালত চারটি মামলা সংশ্লিষ্ট থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
এসব মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ ১১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক ফিরোজ তালুকদারকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের আদালতে মামলাটি করেন নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা। এদিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নির্দেশে অন্য সব আইনজীবী তথা অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপেক্ষা করে একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেন। তার রায় আদালতের আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে দেশে অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র কায়েমপূর্বক শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের যথেচ্ছভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি প্রদান করে। পরে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা ও অন্য আসামিরা যেনতেনভাবে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে জাল ভোট, মৃত ব্যক্তির ভোটপ্রদান করে। নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় গণমানুষের স্বাভাবিক উপস্থিতি ব্যতীত কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন ও বাকস্বাধীনতা খর্ব করাসহ খুন, গুম ও ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা ও নিষ্পেষণ অব্যাহত রাখে।
একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। সরকার হত্যা, গুম ও গ্রেফতারের মাধ্যমে দমনপীড়ন করলে আন্দোলনকারীরা সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে তাদের পাশে সার্বিক অবস্থান নেয়ার অনুরোধ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের নির্দেশে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ কিছু বিপথগামী সদস্য, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা দেশব্যাপী আন্দোলন দমনের জন্য ক্র্যাকডাউনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফিরোজ তালুকদার মিরপুর-১০ গোলচত্বর অতিক্রম করার সময় র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় রাসেল মিয়া নামে একজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমীর আদালতে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে রামপুরা থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ, সাবেক সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান ও সাবেক র্যাব ডিজি হারুন-অর-রশীদ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই দুপুর আড়াইটায় আসামিদের নির্দেশে অজ্ঞাত আসামিদের গুলিতে রাসেল মিয়া মারা যান।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে এলেম আল ফায়দি নামে শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ানকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে সামসুল আরেফিন নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগটি সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ মিয়া আলম বলেন, শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের প্রত্যক্ষ নির্দেশে পুরান ঢাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এলেম আল ফায়দিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক কমিশনার ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ওয়ারীর ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢাকা-৬ আসনের সাবেক এমপি আবু সাইদ খোকন, ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই লক্ষ্মীবাজার এলাকায় জুমার নামাজ আদায়ের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সিটি কর্পোরেশন মহিলা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ আপামর জনগণ বৈষম্যবিরোধী মিছিল শুরু করেন। বৈষম্যমুক্ত একটি মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে স্লোগান দিয়ে রাজপথে অবস্থান করে। আসামিরা গণভবনে বসে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। এরপর নামীয় আসামিরাসহ আরো ৫০-৬০ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ এবং পুলিশ বাহিনীর মাঠ স্তরের ৬০-৭০ জন সশস্ত্র সদস্য একযোগে শান্তিপ্রিয় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। তদের গুলিতে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটের দিকে এলেম আল ফায়দি নামে একজন শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান সরকারি কবি নজরুল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হন।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, নিঝুম মজুমদার ও মুনতাসীর মামুনসহ ৪৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালতে ৪৯ জনের জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন নিহতের বড় ভাই তারিকুল ইসলাম। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, ওবায়দুল কাদের, আছাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হত ইনু, রাশেদ খান মেনন, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, বিপ্লব কুমার, হাবিবুর রহমান, সাদেক খান, শাহজাহান খান।
গত ৪ আগস্ট তেজগাঁও থানাধীন ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজের নিচে সড়কে গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হক।
রাজধানীর প্রগতি সরণিতে গুলিতে মো. সুমন সিকদার (৩১) নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় ১৮০ জনের নাম উল্লেখসহ ২৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বাড্ডা থানায় এ মামলা হয়। নিহতের মা মোছা. মাছুমা এজাহার দায়ের করেন।
মামলার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার ছেলে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। এছাড়াও বাড্ডার ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়েছে।